Thursday, April 9, 2015

রোজার বিবরণ ও রোজার প্রকারভেদ


রোজার শাব্দিক অর্থ হল বিরত থাকা, শরীয়তের পরিভাষায় সুব্‌হে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও স্ত্রী সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকেই রোজা বলা হয়।

রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে একটি। নামাযের পরই রোজার অবস্থান। রোজার মাধ্যমে দুখী ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের দুঃখ কষ্ট কিছুটা হলেও অনুভূত হয়, রোজা মানুষকে ধৈর্য্য ও আত্মসংযমের শিক্ষা প্রদান করে। আল্লাহ্‌ রব্বুর আলামীন উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করে দিয়েছেন। কুরআনে কারীমে এরশাদ হচ্ছে।-
ياايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين  من قبلكم لعلكم تتقون-
উচ্চারণঃ-
"ইয়া আইয়ুহাল্লাজীনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস্‌ সিয়ামু কামা কুতিবা আ'লাল্লাজীনা মিন ক্ববলিকুম লা'আল্লাকুম তাত্তাক্বুন"
অর্থঃ-
হে মুমীনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা আত্মসংযমী হতে পার। অন্যত্র আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেন-
فمن شهد منكم الشهر فليصمه-
উচ্চারণঃ-
"ফামান শাহিদা মিনকুমুশ্ শাহ্‌রা ফালইয়াসুম্‌হু।"
অর্থঃ-
তোমাদের কেউ যদি রমযানকে পায় সে যেন রোজা রাখে। কাজেই বুঝা গেল রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে রোজা রাকা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। রমজান মাসে শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
شهر رمضان الذى انزل فيه القران هدى اللناس وبينات من الهدى والفرقان-
উচ্চারণঃ-
"শাহ্‌রু রামাদানাল্লাজী উন্‌জিলা ফী-হিল ক্বুরআন হুদাল্লিন্নাসি ওয়া বাইয়িনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরক্বান"
অর্থঃ-
রমজান মাস। যাতে মানব জাতির পথ নির্দেশ ও হিদায়াত বিষয়ক সুস্পষ্ট নিদর্শন নিযে ক্বুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যা সত্যকে মিথ্যা হতে পৃথক করে।
হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صام رمضان من اوله لى اخره خرج من ذنوبه كيوم ولدته امه-
উচ্চারণঃ-
ক্বালা রাসুলুল্লাহি (সাঃ) মান সামা রামাদানা মিন আউয়ালিহি ইলা আখিরিহি, খারাজা মিন জুনুবিহী কা-ইয়াওমিও ওয়ালাদাতহু উম্মুহু।
অর্থঃ-
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত রোজা রাখল তার থেকে গোনাহ্‌গুলো অনুরূপভাবে ঝড়ে যায় যেন সে সদস্য প্রসূত ভুমিষ্ট শিশু। অর্থাৎ নবজাতক শিশুর যেমন কোন গোনাহ্‌ থাকেনা; তদ্রুপ পবিত্র রমজানে সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিরও কোন গোনাহ্‌ থাকেনা। বরং আল্লাহ্‌ পাক তার পাপসমূহ মোচন করে দেন। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
لكل شيئ زكوة الجسد الصوم-
উচ্চারণঃ
"লিকুল্লি শাইয়িন যাকাতুন, ওয়া যাকাতুল জাছাদি আস্‌ সাওমু।"
অর্থঃ-
আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, যে বান্দা কেবল আমার জন্যই রোজা রাখে, আর রোজার প্রতি দান আমি নিজেই দিব। এ হাদীসের ভাবার্থ হল, প্রত্যেকটি ইবাদতের জন্য একটি পরিমাণ নির্ধারিত আছে; কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে এটা নেই বরং রোজার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে মহাপুরুষ্কারে পুরুস্কৃত করবেন। যার পরিমাণ আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। অপর এক হাদীসে নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন-
الصوم لى وانا اجزبه-
উচ্চারণঃ
"আস্‌সাওমু নিছফুস্‌ সাব্‌রী ওয়াস্‌ সাবরু নিছফুল ঈমান"

অর্থঃ রোজা হল ধৈর্য্য বা ছবরের অর্ধেক আর ছবর হলো ঈমানের অর্ধেক

অন্য এক কিতাব থেকে সংগৃহিত
সংক্ষেপে রোজার বিবরণ

সুবহে সাদিক্ব হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার ও স্ত্রী ব্যবহার হতে বিরত থাকাকে শরীয়তের পরিভাষায় রোজা বলে। সুবহে সাদিকের পরে অথবা সূর্যাস্তের পূর্বে কিছু পানাহার করলে, রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইচ্ছাকৃত করলে ক্বাজার সাথে কাফ্‌ফারাও ওয়াজিব হবে। যেরকম পানাহার হতে বিরত থাকা ফরজ, তেমনি নিয়ত করাও ফরজ। সমস্ত রোজার নিয়তই রাত্রে করা উত্তম। রমজান এবং নফল রোজার নিয়ত দ্বিপ্রহরের আগে করলেও রোজ হয়ে যাবে; কিন্তু মান্নত এবং ক্বাজা রোজা ও কাফ্‌ফারার রোজা সুব্‌হে সাদিকের আগে নিয়ত না করলে, আদায় হবে না।

রমজানের রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। নামাজের পরেই এর স্থান। রমজান শরীফের রোজা পাগল, নাবালিগ, মুসাফির ও রুগ্ন ব্যক্তি ব্যতীত স্ত্রী, পুরুষ, ধনী, দরিদ্র, অন্ধ, বধির, শ্রমিক, মজুর সকলের উপরেই ফরজ। মহিলাগণের হায়িজ-নিফাসের সময় রোজা রাখা নিষেধ। তবে পরে তা ক্বাজা করতে হবে। নামাজ ও পড়া নিষেধ। কিন্তু নামাজের ক্বাজা আদায় করতে হয় না।

বিনা উযরে ইচ্ছাকৃত কোন ১ টি রোজা রেখে ভেঙ্গে ফেললে, তাকে ১ টির পরিবর্তে কাফ্‌ফারা স্বরূপ এক নাগারে ৬০ টি রোজা আদায় করতে হবে। মাঝে ১ টিও ভাঙ্গতে পারবে না। মাঝে ১ টি ভাঙ্গলে পুনরায় নতুন করে পুরা ৬০ টি রোজা আদায় করতে হবে। ক্বাজা রোজা একসাথেও আদায় করতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন ভাবেও আদায় করতে পারে। কাফ্‌ফারা আদায়কারী যদি রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তবে ৬০ জন মিস্কীনকে ২ বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। ১ জন মিস্কীনকে ৬০ দিন ২ বেলা করে খাওয়ালেই চলবে। ৬০ টি সাদক্বায়ে ফিত্‌র বা তার মূল্য ৬০ জন মিস্কীনকে দিলেও চলবে। সমূদয় ফিত্‌রা বা তার মূল্য একই সময় ২/১ জনকে দিলে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। ৬০ জনকেই দিতে হবে। কোন ব্যক্তি বিনা উযরে ইচ্ছাকৃত ১ টি রোজা তরক করলে, ফাসিক হবে। রোজার ফরজিয়্যাত অস্বীকার করলে বা রোজা নিয়ে উপহাস করলে, কাফির হয়ে যাবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে। ইতিপূর্বে অন্যকোন উম্মতকে প্রদান করা হয়নি-
প্রথমঃ-
রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভী অপেক্ষা বেশী প্রিয়।
দ্বিতীয়ঃ-
সমুদ্রের মাছগুলো রোজাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে।
তৃতীয়ঃ-
বেহেশত্‌কে প্রতিদিন তাঁদের জন্য সুসজ্জিত করা হয়। আর আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, আমার বান্দাগন দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট পরিত্যাগ করে অতিসত্বরই আমার কাছে আগমন করছে।
চতুর্থঃ-
রমজানে দূর্বৃত্ত শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। যাতে করে সে রমজানে এমন সকল কাজ করতে পারেনা যা অন্য মাসে করতে পারে।
পঞ্চমঃ-
রমজানের শেষ রাতে রোজাদারের গোনাহ্‌ মাফ হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্‌! এ ক্ষমা কি শবে ক্বদরে হয়ে থাকে? প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, না; বরং নিয়ম হলো মজদুর কাজ করার পরই তার মজুরী পেয়ে থাকে।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে-

একদা হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন যে, উম্মতে মাহাম্মদীর জন্য কোন্‌ 
মাসকে বেশী ফযীলতের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে? আল্লাহ্‌ পাক বললেন, রমজান মাসকে বেশী মর্যাদা দান করা হয়েছে। তখন মূসা (আঃ) বললেন, এর ফযীলত কেমন হবে? জবাবে আল্লাহ্‌ তা'আলা বললেন, তোমাদের সাধারণের তুলনায় আমার মর্যাদা যেরূপ তদ্রুপ অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানের মর্যাদা।


রোজার প্রকারভেদ
রোজা মোট চার প্রকারঃ
১. ফরজ ২. ওয়াজিব ৩. নফল ৪. হারাম
ফরজ রোজাঃ-
এটা হল রমজান মাসের রোজা ও কাজা কাফ্‌ফারার রোজা।
ওয়াজিব রোজাঃ-
এটা হল মান্নতের রোজা।
নফল রোজাঃ-
মহর্‌রম চাঁদের দশম দিন। তবে এর সাথে পূর্বে বা পরে একদিন মিলিয়ে দু'টি রোজা রাখা উত্তম, কেননা একটি রোজা রাখলে ইয়াহুদীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। হজ্বের দিন রোজা রাখা, শাওয়ারের চাঁদে ৬ টি রোজা রাখা প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা ইত্যাদি নফল।
হারামঃ-

উভয় ঈদের ও আইয়ামের তাশরীফের দিনগুলোতে রোজা রাখা হারাম।

রোজা ও ইফতারের নিয়ত এবং রোজার ফরজ ও সুন্নাত সমূহ

রোজার নিয়ত
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضالك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم

উচ্চারণঃ-
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম্‌ মিন্‌ শাহ্‌রি রামাদানাল মুবারারিক ফার্‌দাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস্‌ সামিউল আলীম।
অর্থঃ-
হে প্রভূ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। সুতরাং তুমি আমার পক্ষ হতে তা কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ।

ইফতারের নিয়ত
اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت
উচ্চারণঃ-
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজক্বিকা আফ্‌তারতু।
অর্থঃ-
হে আল্লাহ্‌! তোমার জন্যই আমি রোজা রেখেছি এবং তোমার প্রদত্ত জীবিকা দ্বারাই রোজা ভঙ্গ করছি।
ইফতার করানোর ফযীলত
রোজা রাখা যেমন ছওয়াবের কাজ তদ্রুপ, রোজা খোলা বা ইফতার করাও অত্যন্ত পূণ্যের কাজ এবং অপরকে ইফতার করানও বহু ছওয়াবের কাজ। বর্ণিত আছে যদি কোন ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায় তবে সে রোজাদারের সমান পরিমাণ ছওয়াব পাবে এবং এতে রোজাদারের ছওয়াব হতে সামান্য কিছুও কম করা হবে না। অপর এক হাদীছে বর্ণিত আছে-
من فطر صائما على تمرة او شربة من ماء او مزقة لبن كان له مغفرة وهو شهر اوله رحمة واوسطه مغفرة و اخره عتق من النار
উচ্চারণঃ-
মান ফাত্‌তারা ফিহি ছা-য়িমান আলা তামারাতিন আও শারবাতিম্‌ মিম্‌ মা-ইন আও মাযক্বাতি লাবানিন কানা লাহু মাগফিরাতান ওয়াহুয়া শাহ্‌রুআওয়ালুহু    রাহ্‌মাতুন ওয়া আওছাতুহু মাগফিরাতুন ওয়া আখিরুহু ইত্ব্‌কুম্‌ মিনান্নার
অর্থঃ-
যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে একটি খেজুর কিংবা এক গ্লাস পানি, কিংবা কিছু শরবত দ্বারা ইফতার করায় তবে এ ইফতার তার পাপ মোচনের কারণ হবে। এটা তো এমন একটি মাস যার প্রথমাংশ হল রহমতের, দ্বিতীয়াংশ বা মধ্যমাংশ হল ক্ষমা বা পাপ মোচনের এবং শেষাংশ হল জাহান্নাম হতে মুক্তির।
من فطر فيه صائما كان مغفرة لذنبه وعتق رقبته من النار-
উচ্চারণঃ-
মান ফাত্‌তারা ফিহি ছা-য়িমান কানা মাগফিরাতান লিজুনুবিহি ওয়া ইত্‌ক্বি রাক্বাবাতিহি মিনান্নার।
অর্থঃ-
যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করায় তবে সে ইফতার করান তার গোনাহ্‌ মোচন ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ হবে

রোজার ফরজ দু'টি
১. নিয়ত করা ২. সুব্‌হে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ হতে বিরত থাকা।

রোজার সুন্নত সমূহ
রোজার মধ্যে কয়েকটি বিষয় সুন্নত-
১. হাত, পা, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও অন্তঃকরণ দ্বারা সিয়াম বা রোজা পালন করা।
২. সর্বদা নেক কাজ করা।
৩. রোজা অবস্থায় দোয়া, দরুদ, তাসবীহ্‌-তাহলীল ও কোরআন তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকা।
৪. বেশী বেশী দান খয়রাত করা।
৫. সময় হওয়ার সাথে সাথে কাল বিলম্ব না করে ইফাতার করা।
৬. রমজানের রাত সমূহ তারাবীহের নামায আদায় করা।
৭. সমগ্র রমজানে তারাবীহের নামাযে সমস্ত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা বা শ্রবণ করা।

৮. রমজান মাসে শেষ দশকে ই'তিকাফ করা।

রোজার মাকরূহ সমূহ
০১. বিনা প্রয়োজনে কোন কিছুর স্বাদ নেওয়া।
০২. বিনা প্রয়োজনে কোন কিছু চর্বণ করা বা চাবান।
০৩. মিথ্যা কথা বলা।
০৪. গীবত করা।
০৫. অশ্লীল কথাবার্তা বলা বা গালিগালাজ করা।
০৬. ইচ্ছাকৃতভাবে সামান্য বমি করা।
০৭. অহেতুক ইফতারে বিলম্ব করা।
০৮. কর্ণ কূহরে পানি প্রবেশ করান।
০৯. পুরষ লিঙ্গের ভিতরে পানি প্রবেশ করানো।
১০. মুখে তেল রাখা।
১১.বার বার কুলি করা বা গোসল করা।
১২. গোসলে অধিক পানি খরচ করা।
১৩. ভেজা কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখা।
১৪. মুখে বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু চাবিয়ে গিলে ফেলা।
১৫. অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখি বমি এসে আবার উদরে চলে যাওয়া।
১৬. রোজা রেখে একেবারেই চুপ থাকা।
১৭. প্রেমাসক্ত হয়ে স্বীয় স্ত্রীকে বা অন্য কাউকে একাধিকবার চুম্বন করা বা কোলে তুলে নেয়া।
১৮. কু-বাসনায় কোন মেয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। সমস্ত দিন নাপাক অবস্থায় থাকা।
১৯. অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।
২০. কয়লা চিবিয়ে বা পাউডার, গুল, পেষ্ট বা অন্য কোন মাজন দ্বারা দাঁতন করা।
২১. কোন জিনিষ মুখে দিয়ে রাখা।
২২. গড়গড়া করা।
২৩. নাকের ভিতর পানি টেনে নেয়া।
২৪. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ থুথু জমা করে গিলে ফেলা।


যে কারণে রোজা ভঙ্গ হয়, কাযা করতে হয়
কিন্তু কাফ্‌ফারা দিতে হয়না
০১. কোন ব্যক্তি কাঠ, পাথর, মাটি ইত্যাদি ভক্ষণ করলে।
০২. অনিচ্ছাকৃত গলার ভিতর পানি ঢুকে গেলে।
০৩. কেউ জোর পূর্বক কিছু খাইয়ে দিলে।
০৪. নিরূপায় হয়ে অন্যের দ্বারা সঙ্গমে লিপ্ত হলে।
০৫. পায়খানা পেশাবের রাস্তায় পিচকারী দিলে।
০৬. ঘুমের মধ্যে কোন জিনিষ খাইয়ে দিলে।
০৭. কানের ভিতর ঔষধ প্রবেশ করালে।
০৮. নাকের ভিতর দিয়ে মস্তকে পানি প্রবেশ করলে।
০৯. অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি করলে।
১০. ঔষধ পেটে বা মাথায় ঢুকে গেলে।
১১. সুব্‌হে সাদিক হয়নি মনে করে সুব্‌হে সাদিকের পর ছেহ্‌রী খেলে।
১২. সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে।
১৩. ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মেন করে পানাহার করলে।
১৪. ঘুমের মধ্যে সঙ্গম করলে।
১৫. অবচেতন অবস্থায় সহবাস করলে।
১৬. দাঁত হতে চানা বুট পরিমাণ কোন কিছু বের করে গিলে ফেললে।
১৭. সামান্য পরিমাণ বমি গিলে ফেললে।
১৮. কুলি করার সময় গলায় পানি ঢুকে গেলে।
১৯. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে সুব্‌হে সাদিকের পর জাগ্রত হলে।
২০. ধুমপান করলে।
২১. ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সুগন্ধির ধোঁয়া নাকের ভিতর টেনে নিলে।

যে সকল কারণে কাযা ও কাফ্‌ফারা উভয় ওয়াজিব
১. ইচ্ছাপূর্বক বিনা ওজরে রোজা না রাখলে।
২. রোজা রেখে ইচ্ছা পূর্বক পানাহার করলে।
৩. রোজা রেখে ইচ্ছা পূর্বক সঙ্গম করলে।
৪. ইচ্ছাপূর্বক মনি নির্গত করলে।

৫. ইচ্ছাপূর্বক ঔষধ সেবন করলে।

কাফ্‌ফারার নিয়ম ও যে কারণে রোজা ভাঙ্গেনা

কাফ্‌ফারার নিয়ম
কাফ্‌ফারা দেয়ার নিয়ম হল একটি রোজার কাফ্‌ফারা হিসেবে লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে। এরপর আর একটি রোজা রাথতে হবে। সর্বমোট ৬১ টি রোজা রাখতে হবে। কাফ্‌ফারার মধ্যে একাধারে না করলে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। একাধারে ৬০ টির মাঝে যদি একটি রোজাও ভঙ্গ করে তবে পুনরায় ৬০ টি রোজা রাখতে হবে।
যদি কেউ অসুস্থতার কারণে ৬০ টি রোজা রাখতে অক্ষম হয় তবে সে একজন মিসকিনকে একটানা ৬০ দিন দুই বেলা পেট পুরে আহার করাবে। কিংবা সেই পরিমাণ খাবার বা খাবারের মূল্য তাদেরকে দিয়ে দিবে। উল্লেখ্য যে, একই রমজানের একাধিক কাজার জন্য কাফ্‌ফারা একবারই ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং রমজানের রোজা ব্যতীত অন্য কোন রোজার কাফ্‌ফারা নেই।

যে সব কাজ করলে রোজা ভাঙ্গে না
০১. ভুলক্রমে কোন কিছু পানাহার করা, অবশ্য মনে হওয়ার সাথে সাথে তা মুখ থেকে ফেলে দিতে হবে।
০২. ভুলে সহবাস আরম্ভ করা, তবে রোজার কথা মনে হওয়ার সাথে সাথেই তা হতে বিরত থাকতে হবে।
০৩. দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হলে।
০৪. কোন কারণ বশতঃ কামভাব ছাড়া অনিচ্ছায় বীর্য স্থলন হলে।
০৫. থুথু গিলে ফেললে।
০৬. নাকে বা কানে পানি প্রবেল করলে।
০৭. গরম ভাত বা তরকারীর ধোয়া পেটে প্রবেশ করলে।
০৮. সুগন্ধি ব্যবহার করলে বা ফুলের ঘ্রান নিলে।
০৯. অন্যের গীবত-কুসা রটালে তবে খুবই খারাপ।
১০. মিথ্যা বললে। উলঙ্গ হলে। অল্প বমি হলে।
১১. হঠা মশা-মাছি, ধুলা-বালি ইত্যাদি পেটে প্রবেশ করলে।
১২. চোখে সুরমা ব্যবহার করলে।
১৩. মিসওয়াক করলে-যদি দাঁত হতে রক্ত বের হয়।
১৪. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে।
১৫. ঠাণ্ডার জন্য গোসল করলে।
১৬. চোখে ঔষধ ব্যবহার করলে।
১৭. শরীরে যে কোন ধরনের ইনজেকশন নিলে।

যে কারণে রোজা ভাঙ্গা বৈধ
১. রোগীর রোগ বৃদ্ধির আশংকা হলে তবে এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শক্রমে রোজা ভাঙ্গা যেতে পারে।
২. সাপে কামড় দিলে।
৩. দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়ের বুকের দুধ রোজার কারণে কমে গেলে সে মা রোজা ভাঙতে পারবে।
৪. মুসাফির ব্যক্তি সফর শুরু করার পর বা প্রবাসে বেশী কষ্টের আশংকা থাকলে।
৫. নারীদের হায়েজ নিফাস হলে রোজা রাখা নিষেধ।
৬. পিপাসায় বা ক্ষুধায় প্রাণ নাশের আশংকা দেখা দিলে।
৭. বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে অসমর্থ হলে।
এসকল কারণে রোজা না রাখলে পরবর্তীতে কাজা করা জরুরী

কতিপর জরুরী জ্ঞাতব্য
০১. নিয়ত ব্যতীত রোজা বিশুদ্ধ হবে না, তবে নিয়ত মনে মনে করলেই হয়ে যাবে। যেমন রোজা রাখার নিয়তে সেহরী খেলে কিংবা রাতে ঘুমানোর সময় এই নিয়ত করলে যে, কাল সে রোজা রাখবে। যদি কেই রোজার নিয়ত করতে ভুলে যায় তবে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করতে পারবে। আর নফল রোজার নিয়ত সুব্‌হে সাদিকের পূর্বেই করতে হবে। অন্যথায় রোজা হবে না।
০২. কোন সুস্থ মুকীম ব্যক্তি যদি রমজানের দিনে কাজা বা কাফ্‌ফারা বা নফল রোজার নিয়ত করে তবে, তার রমজানের রোজাই আদায় হয়ে যাবে।
০৩. ফরজ রোজার কাজা লাগাতার বা একদিন রেখে একদিন বাদ দিয়ে ইত্যাদি পন্থায় রাখতে পারবে।
০৪. যদি ফরজ কোন রোজার মান্নত করে তবে তার উপর ঐ রোজা রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি তা না রাখে তবে ওয়াজিব তরক করার গোনাহ্‌ হবে।
০৫. যদি কোন নির্দিষ্ট তারিখের মান্নত করে তবে তাকে ঐ দিনই রোজা রাখতে হবে। আর অনির্দিষ্ট মান্নত করলে যে কোন দিন রোজা রাখলেই তা আদায় হয়ে যাবে।
০৬. যদি কেউ নিষিদ্ধ দিবস গুলোতে রোজা রাখার মান্নত করে তবে তাকে ঐ দিবস গুলোতে রোজা রাখতে হবে না, বরং পরবর্তীতে কাজা করতে হবে। নিষিদ্ধ দিনে রোজার মান্নত করার কারণে তাকে গোনাহ্‌গার হতে হবে।
০৭. নফল রোজা ভেঙ্গে ফেললে তার কাজা আদায় করা জরুরী হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাদের রমজানের রোজা নফল হবে। তবে তারা তা ভেঙ্গে ফেললে তার কাজা আদায় করতে হবে না।
০৮. সাওয়াল চাঁদের ছয় রোজা একসাথেও রাখা যায়। ইচ্ছা করলে পৃথক পৃথকও রাখা যায়, ঈদের পরের দিন থেকেও তা আরম্ভ করা যায়, তবে একদিন বাদ দিয়ে এক দিন রোজা রাখলে ছওয়াব বেশী হয়।
০৯. সেহরী হওয়া সুন্নত যদিও সেহরী খাওয়ার নিয়তে একগ্লাস পানি পান করে নেয় তবুও সেহ্‌রীর সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

১০. সূর্যাস্ত যাওয়া মাত্র ইফতার করা সুন্নত। অহেতুক বিলম্ব করা মাকরূহ; তবে আকাশ মেঘলা থাকলে দেরী করে ইফতার করাই উত্তম।

সাদকাতুল ফিতির ও ফিৎরার পরিমাণ

১৪৩

ই'তিকাফ ও ই'তিকাফকারীদের করনীয়

Friday, April 3, 2015

লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর


ক্বদর-১৪৪

তারাবিহের নামাজ
রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে ইশার নামাযের পর জামাতের সাথে বিশ রাকাত নফল নামায পড়া হয় তাকে তারাবীহ্ এর নামায বলা হয়। এটা

তারাবিহ্‌ সম্পর্কীয় কতিপয় মাসয়ালা
মাহে রমযানে ইশার নামাযের পর দু'রাকাত করে বিশ রাকাত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্।

তারাবিহ্‌ নামাযের দোয়া
বিশ্রামের সময় চুপ করে বসে থাকা কিংবা পৃথক ভাবে নফল নামায পড়া বা


তারাবিহ্‌ নামাযের মোনাজাত
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নার।




ফিদইয়া
যেই ব্যক্তি অতি বৃদ্ধ হয়ে দূর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রোজা রাখতে পারে না অথবা যেই মহিলা গর্ভাবস্থায় থাকবার কারণে রোজা রাখলে সন্তানের ক্ষতি হবে অথবা যে মহিলা শিশুকে দুধ পান করায়; রোজা রাখলে দুধ শুকিয়ে যায় বা বাচ্চার কষ্ট হয় অথবা অন্য কোন রোগের কারণে রোজা রাথতে পারছেনা, এমতাবস্থায় প্রতি রোজার পরিবর্তে ১ জন মিস্কীনকে ২ বেলা পেট ভরে খাওয়াবে অথবা এক সাদক্বায়ে ফিতর পরিমাণ বা তার মূল্য দিয়া দেয়াকে শরীয়তের পরিভাষায় ফিদইয়া বলে। ফিদইয়া দেওয়ার পর বৃদ্ধের শরীরে যদি রোজা রাখার ক্ষমতা ফিরে আসে, অক্ষম ব্যক্তিদের অক্ষমতা দূর হয়ে যায় তখন তাদেরকে পুনরায় রোজার ক্বাজা আদায় করতে হবে।

সাদক্বায়ে ফিত্‌র
একান্নভুক্ত পরিবার, যাদের খোরপোষের ব্যবস্থা একত্রে হয়, ঈদুল ফিত্‌রের দিন (এমনকি সুবহে সাদিকের পূর্বে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, তার জন্যও) প্রত্যেকের পক্ষ হতে সক্ষম গৃহকর্তার উপর ১ টি কের সাদক্বায়ে ফিত্‌র আদায় করা ওয়াজিব। সাদক্বায়ে ফিত্‌র ঈদের নামাজের আগে আদায় করা উত্তম। ১ টি সাদক্বায়ে ফিত্‌রের পরিমান ১ সের ১২ ছটাক গম বা আটা অথবা তার মূল্য গরীব ও মিস্‌কীনকে বিতরণ করতে হবে।

সক্ষমতার মাপকাঠি : স্বাভাবিক সাংসারিক প্রয়োজন ও ঋণের অতিরিক্ত ৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ তোলা রূপা অথবা তপরিমাণ নগদ টাকা বা এ পরিমাণ মূল্যের কোন আসবাবপত্র বা মালের ঐ দিন মালিক থাকলে, তার উপর  পরিবারের সকলের সাদক্বায়ে ফিত্‌র আদায় করা ওয়াজিব। এই রূপে 'ঈদুল আযহা'র দিন ঐ পরিমাণ মালের মালিক থাকলে, তার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব হবে। এমনিভাবে ঐ পরিমাণ মাল থাকলে যাকাত, সাদকা ইত্যাদি খেতে পারবে না। এই পরিমাণ মাল ১ বছর যার নিকট থাকবে, তার নিকট যাকাত ফরজ হবে।

ই'তিকাফ
রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব হতে শেষ রমজানের সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের মসজিদে, মেয়েদের (নিজগৃহে) নির্ধারিত নামাজের স্থানে নিয়মানুযায়ী পাবন্দী সহিত নিয়্যাত সহকারে অবস্থান করাকে ''ইতিকাফ'' বলে।

পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন ব্যতীত ই'তিকাফের স্থান হতে বাহিরে যেতে পারবে না। এক মুহুর্তের জন্য বিনা প্রয়োজনে বাহির হলে অথবা পায়খানা পেশাব করতে গিয়ে বিনা প্রয়োজনে দেরী করলে ই'তিকাফ ভেঙ্গে যাবে। খাবার নিয়ে আসার লোক না থাকলে, বাইরে দাঁড়িয়ে দেরী না করে খাবার আনতে পারবে। ভিতরে ব্যবস্থা না থাকলে উজুর জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে।

ই'তিকাফে বসে নামাজ, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত, জিকির আজকার, তাস্‌বীহ তাহ্‌লীলে ব্যস্ত থাকবে অথবা (প্রয়োজনে) ঘুমাবে। নিশ্চুপ বসে থাকবে না। বিশেষ প্রয়োজনীয় কথাবার্তা-কাজকর্ম মসজিদে বসে করতে পারবে।
অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও কাজকর্ম মসজিদে বসে করবে না। মহিলাদের ই'তিকাফ অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে মিলামিশা বা আলিঙ্গন দুরু্স্ত নাই। রমজানের শেষ ১০ দিন ই'তিকাফ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। নজর ও মান্নত করলে ওয়াজিব হবে।

রমজান ব্যতীত ই'তিকাফের মান্নত করলে, ই'তিকাফের সাথে রোজাও রাখতে হবে। পূর্ণ ১ দিনের কম শরয়ী ই'তিকাফ হয়  না।